কামারপুকুরের মানিকরাজার বাড়ির দুর্গাপূজার কাহিনী জানুন

সাফল্যরাম বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার কোনো এক গ্রামের গরীব ব্রাহ্মণ ছিলেন।জজমানের পূজা অর্চনা করেই ওনার সংসার চলত।পরিবারে ৫ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব অনটন ও দৈন্যের মধ্যে দিন কাটছিল।

একমত অবস্থায় বর্তমানে কামারপুকুরের অন্তর্গত ভুরসভা গ্রামের জমিদার ইন্দ্রনারায়ণ মল্লিক ওনার গৃহদেবতা দামোদর এর নিত্য সেবার জন্য একজন স্থায়ী ব্রাহ্মণের সন্ধানের জন্য হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ঢ্যাঁড়া পাঠাতে থাকেন।কাকতালীয় ভাবে সাফল্যরাম ঐ ঢ্যাঁড়ার ডাক শুনতে পান।

তিনি তখন ওনার সম্পূর্ণ পরিবারের সহিত ভুরসুভা গ্রামে আসেন এবং জমিদারের থেকে নিত্য সেবার দায়িত্ব বুঝে নেন।অভাবের সংসারে হাল ফেরাতে সাফল্যরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেজ ছেলে মানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায় শহর কলকাতার উদ্দেশ্যে চাকরির আশায় যাত্রা করেন।একমত অবস্থায় তিনি কলকাতার এক কয়লা ও গুল ব্যবসায়ীর কাছে হিসাব রক্ষকের কাজে নিযুক্ত হন।নিজের সততা ও নিষ্ঠার জন্য মালিকের খুব প্রিয় ও স্নেহধন্য হয়ে ওঠেন মানিকরাম।

দৈনন্দিন জীবনে উনি সৎ নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক ব্রাহ্মন ছিলেন।প্রত্যহ প্রাতে গঙ্গাস্নান ও আহ্নিক করে জলস্পর্শ করতেন।তারপর তিনি কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যেতেন।
এমনই একদিন রাত্রিবেলায় স্বপ্না তিনি দেখলেন দশভুজা মা ওনাকে স্বপ্নাদেশ দিলেন,”তোর হাতে আমি পূজা চাই,আমাকে তোর বাড়িতে প্রতিষ্ঠা কর।আমি পূজা নেব।

তখন মানিকরাম পড়লেন মহাসমস্যায়।অভাবের সংসার, নিজেদের অভাবের সংসার,সেখানে মায়ের আরাধনা করবেন কী করে? এই চিন্তায় ওনার দিন যেতে থাকে।
এই ভাবেই দিন যেতে থাকে, একদিন ওনার মালিক মানিকরামের কাজে খুশি হয়ে ওনাকে একটি হীরের আংটি উপহার দেন।তিনি এই মূল্যবান উপহার গ্রহণ করেন এবং তা সুরক্ষার রাখার জন্য আংটিটা মালিকের কাছে রেখে দেন।
এই রকমই একদিন সকালে উনি গঙ্গাস্নানে যান ও স্নান সেরে উনি দেখেন গঙ্গার ঘাটে এক ইংরেজ জাহাজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন।জাহাজের ইংরেজরা তড়িঘড়ি সমস্ত মাল বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন।তারা তখন মানিকরামকে দেখে তার কাছে এসে তাকে সব জাহাজের মাল কিনে নিতে বলেন।

গরীব ব্রাহ্মন কোথায় এত নন পাবে বলায় ব্যাপারীরা যা খুশি মূল্য দিয়ে জাহাজ ভর্তি গোলমরিচ কিনে নিতে বলেন।মানিকরাম তখন মালিকের কাছ থেকে ঐ হীরার আংটি এনে তার বিনিময়ে জাহাজের সমস্ত গোলমরিচ কিনে নেন।তারপর এই গোলমরিচ ওনার মালিকের কাছে রেখে উনি দেশে ফিরে আসেন।
এমত অবস্থায় উনি বারবার দশভুজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামে ফিরে নিজের হাতে মায়ের মাটির প্রতিমা তৈরি করে আশ্বিনের দুর্গোৎসবের শুভারম্ভ করেন।
পরবর্তী ক্ষেত্রে ওনার মালিক সমস্ত গোলমরিচ বিক্রি করে মানিকরামকে টাকা পাঠান ও দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন।সেই থেকেই পূজা আজো চলে আসছে মানিক রাজার পরিবারে।

ধন্যবাদ মানিকরাজার পরিবারের অন্যতম সদস্য অতীন ব্যানার্জীকে।