মা দুর্গার চোখ একেঁছিলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব : কামারপুকুরের লাহাবাড়ির পূজা

স্বয়ং ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব বাল্যকালে নিজেই  একেঁছিলেন মা দুর্গার চোখ।কামারপুকুরের সবথেকে পুরানো এই পূজা শতাব্দী প্রাচীন লাহাবাড়ির পূজা আজও মহাসমারোহে পালিত হয়।

কামারপুকুরের প্রতিদিনের ঠাকুরের পূজার ছবি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ছবি পেতে লাইক ও ফলো করুন কামারপুকুর আমার শহর।

লাহাবাবুদের দুর্গামন্দির

লাহাবাড়ির এই পুজো চালু করেছিলেন জগন্নাথ লাহা।সে প্রায় আনুমানিক ৪৫০ বছর আগের কথা।তারপর কালের ক্রমে পুজো চললেও বন্ধ হয়ে যায় মাঝের ২০-২৫ বছর।তারপর আনুমানিক ২৫০ বছর আগে সেই পুজো পুনরায় শুরু করেন ধর্মদাস লাহা।তারপর থেকে আজ অবধি মহাসমরোহে এই পুজো পালন করে আসছে কামারপুকুরের লাহা পরিবার।

প্রথা মেনে এই পুজোর কাঠামো পুজো শুরু হয় বিপদতারিনী পুজোর দিন আর ঘট উত্তোলন হয় মহালয়ার পরের দিন।প্রতিপদের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় মহাচন্ডীর পুজো।

কামারপুকুরের প্রতিদিনের ঠাকুরের পূজার ছবি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ছবি পেতে লাইক ও ফলো করুন কামারপুকুর আমার শহর।

লাহাবাবুদের পাঠশালা

আর এই পুজোর অন্যতম আকর্ষন হল ৮ দিন ব্যাপী যাত্রাপালা। যা চলে মহালয়ার দিন থেকে ষষ্ঠীর দিন অবধি।আগে ঠাকুরের পাঠশালাতেই হতো এই যাত্রাপালা, তবে এখন এই পাঠশালার আটচালার পাশে মঞ্চ বানিয়ে চলে যাত্রাপালা। যাত্রা উপলক্ষ্যে গ্রামবাসীদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।

যাত্রার এক মুহুর্ত​
২০১৮ সালের যাত্রার সূচী 

এই শতাব্দী প্রাচীন পুজো নিয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদে একবার মামলায় জড়িয়ে পড়েন ধর্মদাস লাহা।একদিন গ্রামের মেঠোপথ ধরে সেই মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে চুঁচুঁড়া আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নীচে বিশ্রামের সময়ে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে মা তাকে বলেন,”মামলায় জয়ী হবি তুই, বাড়ি গিয়ে আমার পুজো শুরু করিস।খানাকুল থেকে দুজন পটুয়া যাচ্ছে।”
তারপর সত্যি মামলায় জিতে আনন্দে মায়ের স্বপ্নবানীর কথা ভুলে যান তিনি।কিন্তু বাড়ি ফিরে চমকে যান তিনি আর দেখেন খানাকুল থেকে দুই প্রতিমা শিল্পী হাজির।তাঁরা ধর্মদাসবাবুকে বলেন,”একটি মেয়ে এসে আমাদের বললে এখানে দুর্গা প্রতিমা গড়তে হবে।তাই আমরা এসেছি”

সেই থেকেই শুরু লাহাবাড়ির দুর্গাপূজা।তারপর সেখানে চালা করে শুরু হয় পুজো, সাল তখন ১১৮২ বঙ্গাব্দ।বর্তমানে সেখানে মায়ের মন্দির অবস্থিত। যেটি প্রতিষ্ঠা হয়  ১২০২ বঙ্গাব্দে।

তবে পুজো শুরু করেও ধর্মদাস লাহা পড়েন মহা অস্বস্তিতে।পুজোই বলি ছিল তখনকার দিনের প্রথা।তবে ধর্মদাসবাবু ছিলেন গোঁসাই গুরুর শিষ্য।তাই বলি কি করে হবে এই ভেবে তিনি চললেন তাঁর গুরুর কাছে সাতবেড়িয়ার মোমিনপুরে।পথে পড়ে সাতবেড়িয়া খাল।পালকিতে করে যেতে যেতে সেখানে তিনি দেখা পান এক বৃদ্ধা রমনীর।বৃদ্ধা ধর্মদাসবাবুকে জিঞ্জেস করেন,” বাবা তুমি কোথায় যাবে?” তখন ধর্মদাসবাবু তার সব কথা খুলে বলেন,” আমি কি করে যে বলি দিই? তাই আমি গুরুর বাড়ি যাচ্ছি” তখন ঐ বৃদ্ধা বলেন ,” মা কি কোনো সন্তানের রক্ত চাইতে পারে? তবে তুই যা দেখ তোর গুরু কি বলে?”তারপর ধর্মদাসবাবু কিছুটা রাস্তা যাবার পর দ্বিধাগ্রস্ত হন ও তার কিছু লোককে পাঠান ওই বৃদ্ধা রমনীর সন্ধান করতে।কিন্তু কেউ তার আর সন্ধান পান না।তিনি যেন কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছেন।তারপর ধর্মদাসবাবু গুরুর বাড়ি যান ও গুরুকে সমস্ত কথা বলেন।সব শুনে গুরুদেব বলেন,” মা নিজেই তোমাকে দেখা দিয়ে বিধান দিয়ে গেছেন”
সেই থেকে লাহাবাড়ির দুর্গাপূজাতে বলিপ্রথা নিষিদ্ধ।

কামারপুকুরের প্রতিদিনের ঠাকুরের পূজার ছবি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ছবি পেতে লাইক ও ফলো করুন কামারপুকুর আমার শহর।

যা আজও মহাসমোরহে পালিত হয়ে চলছে।
বর্তমানে লাহা পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুশো।পুজোর দিনগুলিতে সবাই মন্দিরেই প্রসাদ খান।কারো বাড়িতে রান্না হয় না।আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এখানে কুমারী পুজো হয় নবমীর দিন।আর যিনি মা দুর্গার পুজো করেন তিনি ঘট উত্তোলনের দিন থেকে মন্দিরে থাকেন।ওই মন্দিরেই পুজো করে খান।

কুমারী পুজো (২০১৬ সালের ছবি)

এবার এই পুজো দেখতে চলে আসুন কামারপুকুর।

© কামারপুকুর আমার শহর
© সৌমিক লাহা

বিশেষ কৃতঞ্জতা – কামারপুকুর লাহা পরিবার ,কার্তিক লাহা ও সঞ্জীব ঘোষ ।